
২৮.০৫.২০২০। বৃহস্পতিবার
সকাল ৬.১৬
কাল রাতে ডালসেদ্ধ, আলুসেদ্ধ এবং একমুঠো ভাত আচার দিয়ে মাখিয়ে একটা ঘ্যাঁট খেলাম। মন্দ লাগল না। আসলে বাড়ি ফিরে রান্না করতে করতে খিদেটাই মরে যায়। তখন আর কিছু খেতে ভাল লাগে না। ময়রা যেমন মিষ্টি খায় না। তার মুখে সেই রুচিটাই থাকে না।
আমার অবস্থাও সেই ময়রার মতো। নিজে রাঁধুনির কাজ করতে করতে মুখে আর খাবার রোচে না। মনে হয়, তরিবত করে খাওয়ার কিছু নেই। একটু কালো কফি আর বিস্কুট খেয়ে শুয়ে পড়ি। এমনিতে আই ওয়াজ নেভার আ ফুডি। এখনও নই। ভবিষ্যতেও হব না। শহরের বিভিন্ন রেস্তোঁরার মেনু শখ করে চেখে দেখার কথাও কখনও মনে হয়নি। আমার ভোজ বলতে বিরিয়ানি বা কেএফসি। খাই স্রেফ পিত্তরক্ষার জন্য। বাকিটা ছোঁচামি করে। এমনিতেই বাঁটুল দি গ্রেটের মতো চেহারা। বেশি জুত করে খেলে অস্থানে–কুস্থানে মেদ জমে আরও বেঢপ অবস্থা হবে।
সেই রিস্ক নেওয়া যায় না!
সকাল ৭.১০
আজ থেকে কলকাতা আর বাগডোগরা থেকে অন্তর্দেশীয় উড়ান শুরু হল। টানা দু’মাস পর।
সকাল ৮.৩০
বর্ষাকালের মতো বৃষ্টি পড়ছে। ঝুপঝুপ করে। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা হাওয়া। এমন দিনে তারে বলা যায়..। কী বলা যায়?
বলা যায়.. বানভাসি মানুষের সংখ্যা আরও বাড়ল। আরও ঘরবাড়ি ঝড়ঝঞ্ঝায় ভেঙে পড়ল। আরও অনেক লোকের খাদ্য–বস্ত্র–বাসস্থানের সমস্যা দেখা দিল। আরও বৃষ্টি হতে পারে আগামী কয়েকদিন। আরও মানুষ ভাঙা বাঁধের উপর দাঁড়িয়ে ত্রাণ সাহায্য চাইবেন। আরও বাড়বে বানভাসি মানুষের সংখ্যা।
এমন দিনে তারে বলা যায়.. আমি নিরাপদে আছি। মাথার উপর সুনিশ্চিত ছাদ। ছাদের উপর রাখা ট্যাঙ্কের জল এই সোঁদা আবহাওয়ায় ঠাণ্ডা হয়ে গেলে একটু গিজার চালিয়ে নিলে হয়। উষ্ণ প্রস্রবন নেমে আসে শরীর বেয়ে। ভাবা যায়, আজ আর জামাকাপড় কাচব না। এই জোলো বাতাসে শুকোবে না। আনন্দ এবং বিস্ময়ের সঙ্গে ভাবা যায়, এই ওয়েদারে বাড়িতে খিচুড়ি বানানো গেলে বেশ হতো। আচ্ছা, খিচুড়ির সঙ্গে যদি ডিমভাজা করা যায়? নাকি তার বদলে একটু ঝুরুঝুরু আলুভাজা রাখব?
বলা যায়.. কাল রাতের প্রবল ঝড়বৃষ্টিতে তিনটি জেলায় মৃত্যু হয়েছে চারজনের। আহত সাতজন।
এমন দিনে তারে বলা যায়.. এই করোনা এবং ঘূর্ণিঝড়ের দোধার তলোয়ারের উপর দাঁড়িয়েও আমি কিন্তু দিব্যি আছি। বৃষ্টিঝরা দিনে অপলকে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে নিসর্গ দেখছি। দিব্যি রোজ অফিস করছি। খাচ্ছি–দাচ্ছি আর বগল বাজাচ্ছি।
সকাল ১০.৪৪
গতকাল রাতে সাধন পাণ্ডেকে শো–কজ করেছেন সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়। যা থেকে বোঝা যাচ্ছে, তৃণমূল সাধনের বিষয়টাকে হাল্কাভাবে দেখছে না। পুরোপুরি ইগনোর করছে না। শীর্ষনেতৃত্ব ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এখন দেখার, সাধন এই শো–কজের কী জবাব দেন এবং কবে দেন। দুঃখপ্রকাশ করেন? নাকি নিজের অবস্থানে অনড় থাকেন। সাধনের ঘনিষ্ঠদের দাবি, অবস্থান থেকে নড়বেন না তিনি।
দুটো বিষয়ে কৌতূহল হচ্ছে—
১. সাধন কি আগামী বিধানসভা ভোটে তাঁর কন্যা শ্রেয়ার জন্য মানিকতলা বিধানসভা কেন্দ্রের টিকিট চাইছেন? স্বাস্থ্যের কারণে যদি তিনি নিজে না দাঁড়ান? সেইজন্যই কি দলের উপর এই পরোক্ষ চাপ তৈরি করছেন? তৃণমূলের অন্দরে একাংশে তেমনই বক্তব্য শোনা গেল। যদিও এর কোনও আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেনি। এসব খবরের আনুষ্ঠানিক সমর্থন মেলেও না।
২. টেকনিক্যালি সুদীপ কি সাধনকে শো–কজ করতে বা তাঁর বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারেন? কারণ, তৃণমূলে একটি শৃঙ্খলারক্ষা কমিটি আছে। এসব ক্ষেত্রে যাবতীয় যা ব্যবস্থা ওই কমিটিই নিয়ে থাকে। যা এক্ষেত্রে হয়নি। বিষয়টি কি সাধন দলের অন্দরে তুলতে পারেন? বিশেষত এখন যখন দল তাঁর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েই ফেলেছে, তখন তিনিও কি আর চুপ করে বসে থাকবেন? দেখা যাক।
দুটো তথ্য—
১. ঘনিষ্ঠমহলে সাধন জানিয়েছেন, তিনি এখনই শো–কজের জবাব দিচ্ছেন না। শনিবার নাগাদ জবাব দিতে পারেন। আপাতত তিনি ত্রাণ বিলি নিয়ে ব্যস্ত আছেন।
২. ফোন করে দেখলাম সাধনের মোবাইলের কলার টিউন বলছে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ না আসে, তবে একলা চলো রে’।
দুপুর ১২.৩২
পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে কাল রাতে হাওড়া এসে পৌঁছেছে কয়েকটি ট্রেন। উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, হাওড়া এবং হুগলির বাসিন্দা শ্রমিকদের হাওড়ায় নামিয়ে ট্রেনটি রওনা দিয়েছে মালদহ এবং তারপর নিউ জলপাইগুড়ির দিকে। উত্তরবঙ্গের শ্রমিকরা সেখানে নামবেন। কলকাতায় পৌঁছনো শ্রমিকদের বাসে করে নির্দিষ্ট গন্তব্যে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
নবান্নের ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে জানা যাচ্ছে, সরকারের শীর্ষমহল এই পরিযায়ী শ্রমিকদের নিয়ে গভীর উদ্বেগে রয়েছে। কারণ, ইতিমধ্যেই খবর পৌঁছেছে ওই শ্রমিকদের একাংশ চেন টেনে ট্রেন থামিয়ে বাড়ির কাছাকাছি এলাকায় নেমে পড়ছেন। তারপর তাঁরা কোথায় যাচ্ছেন কে জানে! যাঁরা মাঝপথে নামছেন, তাঁদের মধ্যে করোনা–পরিবাহী কেউ আছেন কিনা, তা–ই বা কে জানে! কে তাঁদের কোয়ারেন্টিনে পাঠাবে? কীভাবে পাঠাবে?
পরিযায়ী শ্রমিকদের দুর্দশা নিয়ে মুখ খুলেছেন সনিয়া গান্ধী। বলেছেন, ‘গত দুমাস ধরে শ্রমিকদের দুরবস্থা দেখছে গোটা দেশ। কেন্দ্রীয় সরকারকে বলছি, খাজানার তালা খুলুন। শ্রমিকদের পাশে দাঁড়ান।’
কর্ণাটক সরকার তাদের রাজ্যে ট্রেন–বাস–বিমানে করোনা–কবলিত পাঁচটি রাজ্য থেকে আগত নাগরিকদের প্রবেশ নিষিদ্ধ বলে ঘোষণা করে দিল। ওই পাঁচ রাজ্য হল মহারাষ্ট্র, গুজরাত, তামিলনাড়ু, মধ্যপ্রদেশ ও রাজস্থান। যা মনে হচ্ছে, এরপর অন্যান্য রাজ্যও এই পথে হাঁটতে পারে। তারাও রাজ্য নির্দিষ্ট করে সেখান থেকে নাগরিকদের আগমন নিষিদ্ধ করতে পারে। বস্তুত, পশ্চিমবঙ্গ সেই পথে হাঁটলে তো এতগুলো ট্রেন এখানে ঢোকেই না!
তাহলে কি দেশের মধ্যে চলাচলেও রাজ্য–নির্দিষ্ট এক অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি হতে চলেছে?
দুপুর ১২.৫২
কাল থেকেই ওই ছবিটা তাড়া করছে। কাল আর ডায়েরিতে লিখিনি। আজ বিভিন্ন কাগজে বেরিয়েছে ছবিটা। বিহারের মুজফ্ফরপুর স্টেশনে অনাহারে মরে পড়ে আছে মা। ঘুমিয়ে আছে ভেবে চাদরে টান মেরে তাকে জাগানোর চেষ্টা করছে উলোঝুলো চেহারার একরত্তি শিশু। সে জানেও না, মা আর ইহলোকে নেই।
কাগজে দেখছি, সোমবার শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে গুজরাত থেকে একদল শ্রমিক মুজফ্ফরপুর স্টেশনে পৌঁছেছিলেন। ওই ট্রেনেই বোন ও তাঁর স্বামীর সঙ্গে কাটিহার যাচ্ছিলেন বছর তেইশের এক মহিলা পরিযায়ী শ্রমিক। সঙ্গে দু’টি শিশু। জল আর খাবার না পেয়ে তীব্র গরমে ট্রেনেই মৃত্যু হয় ওই মহিলার। মুজফ্ফরপুরে ট্রেন ঢুকলে দেহটি স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়। ঢেকে দেওয়া হয় কাপড় দিয়ে। শবদেহ ঢাকা দেওয়া ওই কাপড় ধরেই টানছিল শিশুটি।
ওই শিশুটি কি ওই মৃত তরুণীরই সন্তান? খবরে বলছে, ওই তরুণীর সঙ্গে দুটি শিশু ছিল। যদি তা–ই হয়, তাহলে তারা কোথায় গেল? মৃত মা’কে ফেলে তারা কি সেই ট্রেনেই চলে গেল কাটিহার? নাকি একটি শিশুকেও স্টেশনে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল মায়ের মরদেহের সঙ্গে? অন্য শিশুটি তাহলে কোথায় গেল? মনে হচ্ছিল, ছবির শিশুটিই কি মাতৃহারা? নাকি সে স্টেশনে এঁটোকাঁটা খেয়ে ঘুরে–বেড়ানো আলাদা এক অনাথ?
এমন কত প্রশ্ন, এমন কত যে দৃশ্য রোজ ঘুরেফিরে আসে দুঃস্বপ্নের মতো! ছবিগুলো নিয়ে হিল্লোল ওঠে। দু–একদিন আলোচনা হয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় শোক এবং বিস্ময়ের ঝড় ওঠে। কমেন্ট হয়। শেয়ার হয়। তারপর কী হয় কেউ জানে?
মুজফ্ফরপুরের ভাইরাল ভিডিও নিয়ে আজ রাজনীতির কারবারিরা ঝগড়া করতে মাঠে নেমে পড়েছেন। কিন্তু ওই শিশুটি কে ছিল? কেউ জানে? ছবি তোলার পর মাতৃহারা শিশুর কী হল, কেউ খোঁজ রেখেছে? কেউ জানে তার পরিচয়?
অপারগতা মার্জনীয়। কিন্তু আমার চোখে পড়েনি।
দুপুর ১.০০
বিজেপি–র মুখপাত্র সম্বিত পাত্রকে করোনার উপসর্গ–সহ হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়েছে। আবার প্রমাণ হল, করোনা সাম্যবাদী। সে কাউকে ছাড়ে না। বিশেষজ্ঞরা কি সাধে বলছেন, পৃথিবীর কেউ করোনা থেকে রেহাই পাবে না। কারও ক্ষেত্রে বোঝা যাবে। কারও যাবে না।
দুপুর ১.৩১
লকডাউন বাড়ছে। তেমন ইঙ্গিতই স্পষ্ট। নিউজ পোর্টাল বলছে, আজ ভিডিও কনফারেন্সে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব নাকি কেন্দ্রের ক্যাবিনেট সচিবকে জানিয়ে দিয়েছেন, রাজ্য সরকার এখনই লকডাউন তুলতে চাইছে না। তারা লোকাল ট্রেনও চালাতে চায় না এখনই। তাতে সংক্রমণ বৃদ্ধির সম্ভাবনা রয়েছে।
এতদ্বারা মনে হচ্ছে, লকডাউন ৪–এর পর এবার লকডাউন ৫ আসছে। শোনা যাচ্ছে, আগামী রবিবার ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে আরও দু–সপ্তাহ লকডাউন বাড়ানোর কথা ঘোষণা করবেন প্রধানমন্ত্রী। ইতিমধ্যেই আরও কিছু রাজ্য লকডাউন বাড়ানোর আর্জি জানিয়েছে।
যা দেখছি, তাতে মনে হচ্ছে, করোনার মতো লকডাউনও আমাদের জীবনের অঙ্গ হয়ে গেল। ধাপে ধাপে কিছু ছাড় হয়তো থাকবে। দেওয়াও হবে। কিন্তু ঝপ করে পূর্ণাঙ্গ লকডাউন তোলা হবে না। লকডাউনের মতো সিদ্ধান্ত ঝপ করে, স্বল্প নোটিসে মানুষের জীবনে নামিয়ে আনা যায়। কিন্তু সেভাবে সেটা তুলে নেওয়া যায় না। তাই এই অনিচ্ছুক বিবাহ চলতে থাকে। চলতেই থাকে।
দুপুর ২.৫৫
রোজ অফিসে বেরোনর আগে এই সময়টায় অনেক হাজিবাজি চিন্তা মাথায় আসে। যেমন এখন মনে হচ্ছে, এরপর থেকে বিত্তের শ্রেণি নির্ণয় করবে স্বাস্থ্যখাতে তার খরচ। সেই অনুযায়ী নিম্নবিত্ত, মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্ত শ্রেণি ঠিক হবে। বাড়ি–গাড়ি আর স্বচ্ছলতার সূচক থাকবে না। যারা ভাল হাসপাতালে থাকতে পারবে, সেখানে চিকিৎসা করানো অ্যাফোর্ড করতে পারবে, তারা হবে উচ্চবিত্ত। তার পরের ধাপগুলোও সেভাবেই চিহ্নিত হবে। যেমন, কেউ নিজের খরচে পিপিই কিনতে পারলে তাকে রাখা হবে উচ্চ থেকে মধ্যবিত্তের ব্র্যাকেটে। যারা পারবে না, তারা হবে নিম্নবিত্ত বা নিম্ন মধ্যবিত্ত।
এরপর বড়লোক আর গরিব চেনা যাবে তার স্বাস্থ্যবিমার বার্ষিক প্রিমিয়ামের অঙ্ক দিয়ে।
বিকেল ৫.০০
সুপ্রিম কোর্ট এক অন্তর্বর্তীকালীন আদেশে জানিয়ে দিল, পরিযায়ী শ্রমিকদের থেকে কোনওভাবেই ট্রেনের ভাড়া নেওয়া যাবে না। ভাড়ার টাকা ভাগাভাগি করে দিতে হবে দুই রাজ্যকে। যে রাজ্য থেকে তারা যাচ্ছে এবং যে রাজ্যে গিয়ে পৌঁছচ্ছে। যে রাজ্য থেকে যাত্রা শুরু হচ্ছে, সেই সরকারকে শ্রমিকদের জন্য খাবার, পানীয় জল এবং আশ্রয়ের ব্যবস্থা করতে হবে। যতদিন না তারা যাত্রা শুরু করছে। আর যাত্রা শুরুর পর খাবারের ব্যবস্থা করতে হবে রেল কর্তৃপক্ষকে।
বিকেল ৫.১২
উপ্স! চেতলায় গোলমাল। এলাকার একটা কমিউনিটি হলে নাকি ববি কোয়ারেন্টিন সেন্টার তৈরি করতে গিয়েছিল। খবর পেয়েই লোকজন রাস্তায় নেমে পড়েছে। তুমুল বিক্ষোভ চলছে। ব্যাপক হল্লা। ভূমিপুত্রকে ঘটনাস্থলে আসতে হয়েছে পরিস্থিতি সামলাতে। কলকাতা পুরসভার মুখ্য প্রশাসক বলছেন, ‘কোনও কোয়ারেন্টিন সেন্টার করা হচ্ছে না। দুটো পরিবার গাছ কাটতে এসেছে। তারা সারাদিন কাজের পর রাতে এসে এখানে থাকছে। ঘুমোনর জন্য।’
পাশাপাশিই ববির অভিযোগ, দু–একজন লোক উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কোয়ারেন্টিন সেন্টার গড়ার কথা রটিয়ে দিয়েছিল। তারা ঘোলা জলে মাছ ধরতে চায়।
বিকেল ৫.৩২
বাসে উঠলেই ১৪ টাকা। সেই টাকায় ২ কিলোমিটার। তার পর থেকে প্রতি কিলোমিটারে ৫ টাকা। এমনই প্রস্তাব আজ দিয়েছে বেসরকারি বাসমালিকদের সংগঠন। অর্থাৎ, ৩ কিলোমিটার গেলে ১৯ টাকা। ৪ কিলোমিটারে ২৪ টাকা।
এই প্রস্তাব কি মানবে রাজ্য সরকার? দেখা যাক।
সন্ধ্যা ৬.৩৭
গত কয়েকদিন ধরে বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে এই সময়টায় একটা অচেনা নম্বর থেকে ফোন আসছে। সাধারণত অচেনা নম্বর ধরি না। না ধরলে আর খুব একটা একই নম্বর থেকে ফোন আসে না। কিন্তু এই নম্বরটা থেকে আসছে। প্রায় রোজই। কৌতূহল হল। অগত্যা ‘ট্রু কলার অ্যাপ’ নামিয়ে নম্বরটা ফেললাম। দেখলাম লেখা আছে ‘সুব্রত মুখার্জি’।
বলে কী? তাই নাকি? সটান ফোন ঘোরালাম এবং সেই পরিচিত খোনা গলা ভেসে এল। সুব্রত’দাই বটে। এবং তিনি উচ্ছ্বসিত— ‘আরে অনিন্দ্য! তোমায় তো রোজ ফোন করি। তুমি তো ধরছোই না! কতদিন কথা হয় না তোমার সঙ্গে।’
অচেনা নম্বর ধরি না, এটা সুব্রত’দাকে বলার মতো তালেবর এখনও হইনি। অতএব আমতা আমতা করে বললাম, আসলে আপনার এই নম্বরটা জানা ছিল না। আপনার দুটো নম্বর সেভ করা আছে আমার কাছে। কিন্তু এটা সেভ করা ছিল না। সুব্রত’দা বলল, ‘ঝড়ের পর সব ফোন ডাউন। তাই এই নম্বরটা নিয়েছি।’ তারপর কিছুক্ষণ সুখদুঃখের কথা হল। সুব্রত’দার সঙ্গে কথা বললে সবসময়েই ভাল লাগে। আজকের মিনিটপাঁচেকও তার ব্যতিক্রম হল না। দেখলাম, ঘরবন্দি থাকলেও স্পিরিটটা একই আছে। ঠিক হল, একদিন যাব। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আড্ডা দিয়ে আসব।
রাত ৮.৩০
গত ২৪ ঘন্টায় রাজ্যে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৩৪৪ জন। সাম্প্রতিককালে একদিনে সবচেয়ে বেশি। মৃত্যু হয়েছে ৬ জনের। রাজ্যে করোনায় মৃতের সংখ্যা আপাতত ২৯৫।
রাত ১০.০৫
পশ্চিমবঙ্গ সরকার লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়ে কোনওভাবেই কোনও মতামত কোথাও ব্যক্ত করেনি। রাজ্য এ বিষয়ে কোনও সিদ্ধান্তও নেয়নি। এ বিষয়ে যে খবর ঘুরছে, তা অসত্য। গসিপ। টুইট করে এইমাত্র জানাল রাজ্য স্বরাষ্ট্র দফতর।
রাত ১০.৩৩
বিকেলের পর রোদ উঠেছিল। ফলে মনে হয়, কাল থেকে আর মেঘলা আকাশ থাকবে না। রোদ উঠবে আবার।
ডায়েরি বন্ধ করতে করতে আবার মনে হল মুজফ্ফরপুর স্টেশনের সেই খুদেটার কথা। কোথায় গেল সে? কার কাছে? তাকে কি কোনও হোমে পাঠানো হল? কেউ তাকে বাড়ি নিয়ে গেল? সে কি এখনও হারা উদ্দেশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে সেই স্টেশনেরই আনাচে–কানাচে? নাকি কেউ তাকে কাঁধে তুলে নিয়েছে পরিবারের কাছে পৌঁছে দেবে বলে? তার ভাগ্যে কি জুটেছে কোনও বজরঙ্গী ভাইজান?
নাহ্, পথের শিশুকে কাঁধে তোলার মতো বজরঙ্গী ভাইজানদের দেখা শুধু সিনেমাতেই পাওয়া যায়।
আজকের ডায়েরী বেশ ভালো লাগলো —-যেভাবে লকডাউন এর সময় বাড়ছে তাতে বিষয় টা কোথায় গিয়ে দাডাবে কে জানে?
👌👌👌👌👌
শেয়ার করলাম।
LikeLike
dekha jak
LikeLike