লকডাউন ডায়েরি – ৮ মে, ২০২০

০৮.‌০৫.‌২০২০। শুক্রবার

সকাল ৮.‌৪০

আবার একটা খারাপ সকাল। ঔরঙ্গাবাদের জালনায় ১৬ জন পরিযায়ী শ্রমিককে পিষে দিয়ে গিয়েছে একটা মালগাড়ি। টানা ৪৫ কিলোমিটার হাঁটার পর তাঁরা ক্লান্ত হয়ে রেললাইনের উপরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলেন। দলে ছিলেন ১৯ জন শ্রমিক। মারা গিয়েছেন ১৬ জন। বাকিরা গুরুতর আহত। টিভি বলছে, ওই শ্রমিকরা একটি ইস্পাত কারখানায় কাজ করেন। জালনা থেকে যাচ্ছিলেন ভুসাওয়াল। ঔরঙ্গাবাদ থেকে ট্রেন ধরার কথা ছিল নাকি।

তাত্ত্বিক এবং রেলের কর্তারা নিশ্চয়ই বলবেন, রেললাইন ধরে তো রেলগাড়ি যাবে। মানুষ যাবে কেন?‌

সত্যিই তো। রেললাইন ধরে মানুষ যাবে কেন?‌ মানুষ যায়ওনি তো। কারণ, যাঁদের মাথা গুঁড়িয়ে গেল ভীমবেগে আসা রেলগাড়ির লোহার চাকার নীচে, তালগোল পাকিয়ে মাংসের মণ্ড হয়ে গেল দেহ, তাঁরা তো আসলে মানুষ নন!‌ তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। একেবারে অন্য একটা প্রজাতি। যাঁরা গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির মতো বিন্দুতে বিন্দুতে ছেয়ে ফেলেছেন এই দেশের পথঘাট। অতিমারীর ধোঁয়ায় কাতারে কাতারে, দলে দলে, লক্ষে লক্ষে তাঁরা বেরিয়ে এসেছেন কোটর থেকে। গর্ত থেকে। এসে পড়েছেন ভদ্রলোকদের চোখের সামনে। আর ভেবে পাচ্ছেন না কোথায় লুকোবেন। কীভাবে লুকোবেন।

ঠিকই তো। ওই নিহতেরা তো মানুষ নন!‌ তাঁরা পরিযায়ী শ্রমিক। ভাষান্তরে, মনুষ্যেতর প্রাণী। সমাজের উচ্ছ্বিষ্টভোগী, কোণঠাসা, নাচার। তাঁরা যেনতেন প্রকারেণ ঘরে পৌঁছতে চান। বড় রাস্তা দিয়ে গেলে পাছে পুলিশ ধরে! পাছে তাঁদের ভিখিরির ঝুলি হাতড়ে লকডাউনে বাইরে বেরোনর দাদন নেয়! তাই তাঁরা রেললাইন ধরে শর্টকাট করেন। আর ‌একটা সময়ে হা–ক্লান্ত অবস্থায় ঘুমিয়ে পড়েন রেললাইনের বালিশে মাথা রেখে। পিঠের তলায় কংক্রিটের স্লিপার আর পাথরের টুকরোর গদি। মাথার উপর থালার মতো পূর্ণিমার গোল চাঁদ। কী রোমান্টিক!‌ না? ‌

তাঁরা কি ভেবেছিলেন, ভোরের আলো ফোটার পরে পরেই তাঁদের যাত্রা শুরু হবে অনন্তের পথে?‌

সকাল ৯.‌৪৫

নরেন্দ্রপুরের বন্ধু এবং অধুনা রেলের দায়িত্বশীল অফিসার নীলাঞ্জনকে বিলাসপুরে ফোন করলাম। ও তখনও বাড়িতে। অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। শুনেই বলল, ‘তাহলে তো লম্বা সাইরেন বেজেছে!’

‌মানে?‌

জানা গেল, কোথাও কোনও রেলদুর্ঘটনা হলেই সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের হেড কোয়ার্টারে সাইরেন বাজিয়ে দেয় কন্ট্রোল রুম। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি হলে পরপর তিনবার লম্বা সাইরেন বাজে। অনেকক্ষণ ধরে। প্রাণহানি না হলেও তিনবারই সাইরেন বাজে। কিন্তু শর্ট ডিউরেশনে। পুরো রেল কলোনিতে সেই সাইরেন শোনা যায়। তার আওয়াজও নাকি বিটকেল!‌ শুনলেই পিলে চমকে যায়। তখন যে যেখানে আছেন রেলের অফিসাররা, শার্ট–পেন্টুলুন গলিয়ে অফিসে দৌড়োন।

এটা জানতাম না। বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি?‌ জানলাম। শিখলাম। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিখি।

সকাল ১০.‌০০

একটা প্রশ্ন টিকটিক করছিল ভিতরে। ১৯ জনের পরিযায়ী শ্রমিকের ওই দলটা কেন রেললাইনের উ‌পর ঘুমিয়ে পড়ল? তারা তো লাইনের পাশেও ঘুমোতে পারত। কিম্বা পাশের ঝোপজঙ্গলের ধারে। কেন লাইনের উপর?‌

ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতায় জানি, দূর থেকে ট্রেন আসার সময় লাইনে হাত রাখলে একটা কাঁপন ধরা পড়ে। কান পাতলে একটা দূরাগত গুমগুম আওয়াজ পাওয়া যায়। ছোটবেলায় হিন্দু স্কুল থেকে বাড়ি ফিরতাম স্কুলের উড়িয়া বেয়ারা দুর্যোধন’দার সঙ্গে। কখনও কখনও হাত ছাড়িয়ে উল্টোডাঙ্গা স্টেশনের লাইনে কান পাততাম। হাত রাখতাম। ওই শ্রমিকরা শুনতে পেলেন না? কতদিনের কালঘুমে আছন্ন ছিলেন তাঁরা? পাড়ি দিয়েছিলেন কতটা পথ? যে ঘুমে অচেতন হয়ে গেলেন? আর উঠলেন না।

মুম্বইয়ে ফোন করে যা জানলাম, তা সত্যি হলে ভয়াবহ!‌ ওই শ্রমিকদের কে বা কারা বলেছিল, ঔরঙ্গাবাদ থেকে ‘শ্রমিক স্পেশাল’ ট্রেন ছাড়বে। সেটা যাবে ভুসাওয়াল। ওই পরিযায়ী শ্রমিকরা সেই ট্রেন ধরতেই রেললাইন ধরে ঔরঙ্গাবাদের দিকে রওনা দিয়েছিলেন। কিন্তু পৌঁছতে পারেননি। তখনও অনেক রাস্তা বাকি। ফলে তাঁরা ঠিক করেছিলেন, লাইনের উপর শুয়ে থাকবেন। যাতে দূর থেকে ট্রেন আসার আওয়াজে ঘুম ভেঙে গেলে তাঁরা মাঝপথে ট্রেন থামিয়ে তাতে উঠে পড়তে পারেন।

এই তথ্যের কোনও সরকারি পুষ্টি হওয়া কঠিন। সম্ভবত কখনও হবেও না। কিন্তু বারবার মনে হচ্ছিল, একটা মিথ্যে খবরের ভিত্তিতে বেঘোরে এতগুলো প্রাণ চলে গেল!‌ এ তো দুর্ঘটনা নয়। খুন!‌

বেলা ১১.‌২৫

প্রচুর কাজ নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলাম। মূলত তিনটে কাজ। অধিকাংশই হল না।

ব্যাঙ্কে গিয়ে মায়ের পেনশনটা তুলে আনার ইচ্ছে ছিল। চেক সই করানোর সময়ই মা বলল, ‘আজ কি ব্যাঙ্ক খোলা? ‌রবীন্দ্রজয়ন্তী তো।’ তাই? ‌রবীন্দ্রজয়ন্তীতে ব্যাঙ্ক ছুটি থাকে?‌ এটা তো জানা ছিল না। বিশ্বাস হল না। মনে হল, গিয়ে দেখি। রাস্তা তো ফাঁকাই আছে। বন্ধ থাকলে চলে আসব। খুব সময় নষ্ট হবে না। গিয়ে দেখলাম শাটার ফেলা রয়েছে। ব্যাঙ্ক সত্যিই বন্ধ। সত্যি, এখনও কতকিছু জানি না।

পরের স্টপ:‌ জিডি মার্কেট। লকডাউন ডায়েরি লিখতে লিখতে কলমের কালি ফুরিয়ে গিয়েছে। আসলে এতদিন টানা এতখানি করে তো কলমে লেখা হয় না। ফিল্ডে গিয়ে নোট নেওয়া তো কবে চুকে গিয়েছে। এখন কলমের ব্যবহার শুধু বিভিন্ন ধরনের দরখাস্ত সই করতে। কিন্তু এবার কালি ফুরোচ্ছে দ্রুত। রিফিল দরকার। মুশকিল হল, বিশেষ ধরনের রিফিল ছাড়া আবার লিখতে পারি না। সেই বিলাসিতাটা এখনও ছাড়তে পারিনি। হয়তো এবার ছাড়তে হবে। কারণ, রিফিল পাওয়া গেল না। কবে আসবে, তা–ও জানতে পারলাম না। ধুস!‌

মার্কেটে রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং তৎসহ মুখ্যমন্ত্রীর করোনা সংক্রান্ত সতর্কীকরণ চালানো হয়েছে। সঙ্গে ইন্দ্রনীলের করোনা নিয়ে ভরাটগলার গান গমগম করছে। এটাই কি সরকারি নির্দেশ হিসেবে দেওয়া হয়েছিল কাল?‌ যে রবীন্দ্রজয়ন্তীতে সকাল ৯টা থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত রবীন্দ্রসঙ্গীত এবং মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্য বাজাতে হবে। বিভিন্ন জায়গায় ট্যাবলো নিয়ে গিয়ে রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে হবে। যা নিয়ে বিরোধীরা কিছু নিস্ফল হল্লা করেছে।

জিডি মার্কেটে বিপ্লবের সঙ্গে দেখা হল। মুখ চুন করে বসে আছে। বলল, গতকাল থেকে দোকান খুলছে। কিন্তু কাজ নেই। কারিগরও নেই। বিপ্লবের দুই সন্তান। দ্বিতীয়টির আবার স্রেফ কয়েক মাস বয়স। কী যে হবে! ভাল লাগে না। ‌ওর কাছে অনেকদিন আগে একটা শার্ট দিয়েছিলাম অল্টার করাতে। হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে হবে বলেও মনে হয় না। শার্টটা খানিক খোঁজাখুঁজি করালাম বিপ্লবকে দিয়ে। পাওয়া গেল না। কোথায় কাপড়ের পাহাড়ে ঢুকে বসে আছে।

সবিতা’দির টাকাটা দেওয়া বাকি ছিল। লকডাউনের জন্য আসতে পারছে না। আজ অবশেষে আমিই গিয়ে দিয়ে এলাম। এই একটা কাজ সাসসেসফুলি হল অ্যাটলিস্ট।

দুপুর ১২.‌২৫

বিক্রম সিং খাঙ্গুরার গান শুনতে শুনতে ওয়ার্কআউট করলাম। বিনা যন্ত্রানুষঙ্গে। কালোয়াতি বুঝি না। গিটকিরি বুঝি না। উচ্চাঙ্গ বুঝি না। কানে যেটা লাগে, সেটাই আমার কাছে গান। অকালপ্রয়াত বিক্রমের রবীন্দ্রসঙ্গীত খালি গলায় আমার কানে বেশ লাগে। লেগেছিল। সে গানের ব্যাকরণ বা গায়কি বিচার করার যোগ্যতা বা ধৃষ্টতা আমার নেই। কোনওদিন হবেও না। কিন্তু কোনও কোনও গলা আমায় পেড়ে ফেলে। যেমন আজ ফেলল। বিক্রমের গলা।

অনেক বছর আগে এক সন্ধ্যায় মায়ের সঙ্গে বিধাননগর মেলার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলাম। মাইকে ভেসে এল, ‘ঘাসে ঘাসে পা ফেলেছি, বনের পথে যেতে’। অত বলিষ্ঠ নারীকণ্ঠে ওই লাইনগুলো আগে শুনিনি। কী যেন একটা ছিল গলায়। মায়ের হাত ধরে টানতে টানতে মেলার মাঠে ঢুকে পড়লাম। মঞ্চের সামনে গিয়ে দেখলাম, একটি মেয়ে দাপিয়ে গাইছে। সেই আমার প্রথম শোনা লোপামুদ্রা মিত্রকে। ওর গলা সম্পর্কে তখন যা মনে হয়েছিল, এখনও তা–ই মনে হয়— বলিষ্ঠ।

গানের সঙ্গে যন্ত্রানুষঙ্গও মন দিয়ে শোনা আমার অভ্যাস। দুটো পরস্পরের কমপ্লিমেন্টরি তো। ইন ফ্যাক্ট, গানের মতোই আমার কানে লেগে থাকে মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট। ইদানীংকালে আমার সবচেয়ে পছন্দ জয়ের মিউজিক অ্যারেঞ্জমেন্ট। দারুণ লাগে। মাসপাঁচেক আগে একটা নেমন্তন্ন বাড়িতে জয়কে সামনে পেয়ে বলেও ফেললাম, ‘নিশীথে’ অ্যালবামটায় তোমার অ্যারেঞ্জমেন্ট শুনে ব্যাপক লেগেছিল। কিন্তু সিডি–টা কোথাও পাইনি। বোধহয় ওটা এখন আর বাজারে পাওয়াও যায় না। তুমি কি ওটা পাঠাতে পারো কোনওভাবে?‌

জয় সরকার মানুষ ভাল। সঙ্গে সঙ্গে ই–মেল আইডি নিয়ে নিল। বলল, পুরো অ্যালবামটাই মেল করে দেবে। এখনও আসেনি মেল। নিশ্চয়ই লকডাউনে আটকে আছে কোথাও না কোথাও। এসে পড়বে।

দুপর ১২.‌৪০

বিছানায় বসে বসে যখন এই এন্ট্রি লিখছি, তখন মাথা আর কপাল থেকে টপটপ করে ঝরে পড়ছে পরিশ্রমের স্বেদবিন্দু। এই খাটুনিটা আমার ভাল লাগে। এই খাটুনিটা আমায় কনফিডেন্স দেয়— লড়ে যাব।

এইমাত্র দেখলাম, স্নিকার্সের সোলের কিছু পেস্টিং খুলে গিয়েছে। বিস্কুটের টুকরোর মতো কয়েকটা খসেও পড়েছে। আগে হলে ভাবতাম, কবে এই জুতোজোড়া জামির লেনের ভারত সেবাশ্রম সঙ্ঘে গিয়ে দান করে নতুন একজোড়া কিনব। এখন ভাবছি, কুইকফিক্স বা ডেনড্রাইট কিনতে হবে। সোলটা জুড়ে নিলেই তো দিব্যি কাজ চলে যায়। নতুন জুতো কিনে টাকা নষ্ট করব কেন খামোখা? ‌এসব ছোটখাট ঘটনা ঘটলে আমার ভাল লাগে। এসব ছোটখাট ঘটনা আমায় জ্ঞান দিয়ে যায়— চাইলেই মিনিম্যালিস্ট জীবন বাঁচা যায়। জীবন থেকে ছেঁটে ফেলা যায় অপ্রয়োজনীয় আর বাড়তি চাহিদা।

‌দুপুর ১২.‌৪৫

গুরুজন, মহাজ্ঞানী এবং হিতৈষীদের পরামর্শ মেনে কোলবালিশটা রোদে দিলাম। কারণ, কলারবোনটা এখনও একটু টাটাচ্ছে।

দুপুর ১.‌৫০

আজ আবার গিয়েছিলাম জগদীশের কাছে। ওর হাতে লেখা বন্ধুর নামের উল্কিটার ফয়সালা করতে হতো।

ফয়সালা হল। ছোট্টবেলায় দুই বন্ধু একে অপরের হাতে পরস্পরের নাম উল্কি করিয়েছিল। ইয়ে দোস্তি হাম নহি তোড়েঙ্গে টাইপ। জগদীশের হাতে লেখা —কমল’। কমলের হাতে ‘জগদীশ’। তখন দু’জনই থাকত দক্ষিণ বারাসতে। একসঙ্গেই বড় হওয়া। কিন্তু কমলের পরিবার অবস্থাপন্ন। জমিজিরেত আছে। সেখানে চাষবাস হয় ভালই। জগদীশ গরিব। তার জমিও নেই। ফলে তাকে রোজগারের ধান্দায় আসতে হয়েছে শহরে। স্ত্রী এবং দুই পুত্রকন্যাকে নিয়ে শহরে বাড়িভাড়া করে থাকে সে। কমল থাকে গ্রামের বাড়িতে। কিন্তু রোজ দুই বন্ধুর ফোনে কথা হয় দু–তিনবার।

ডালায় ফল সাজিয়ে বিক্রি করে ক্ষুন্নিবৃত্তি করে জগদীশ। বন্ধু কমল জোতদার। এই কঠিন জীবন না বেছে নিয়ে বন্ধুর কাছে সাহায্য চাইলেই তো হতো?‌

ফল ওজন করতে করতে মাস্কের আড়ালে হাসল ছোটখাট চেহারার যুবক, ‘ওর কাছে টাকার সাহায্য চাইলে কি আর বন্ধুত্বটা থাকত?‌ তার চেয়ে এটাই ভাল। ও ওর মতো থাকে। আমি আমার মতো। দু’জনে সুখদুঃখের কথা বলি। বন্ধুত্বের মধ্যে টাকাপয়সা ঢোকালে সেটা কি আর বন্ধুত্ব থাকে?‌ বলুন?’

দু’পাশে মাথা নাড়লাম। থাকে না। যতদিন বাঁচি, ততদিন শিখি।

‌বিকেল ৪.‌১৭

রবীন্দ্রসদনের সামনের রাস্তায় টেবিলের উপর রবি ঠাকুরের পেল্লায় ছবি বসানো হয়েছে। রবি ছবির মাথায় ইয়াব্বড় গার্ডেন আমব্রেলা। নীল–সাদা ডোরাকাটা। সেই ছাতার সঙ্গেই টেবিলের উপরে পাতা সাদা চাদরও বৈশাখ অপরাহ্নের তপ্ত হাওয়ায় পতপত করে উড়ছে।

রবীন্দ্রজয়ন্তী উপলক্ষে মুখ্যমন্ত্রীকে বেশ কিছুদিন পর আর আবার প্রকাশ্যে দেখা গেল। সঙ্গে মন্ত্রী ইন্দ্রনীল। মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে রবীন্দ্রসদনের চত্বরে গিয়ে পূর্ণাবয়ব মূর্তির পাদদেশে ফুলের শ্রদ্ধার্ঘ্য অর্পণ করলেন। তারপর বাইরের ছবিতে। বাকিরাও পুষ্পার্ঘ্য দিলেন। মন্ত্রী, আমলা, পুলিশ। অতঃপর মুখ্যমন্ত্রী একটি নাতিদীর্ঘ ভাষণ দিলেন। বললেন, লকডাউনের জন্য এভাবেই রবীন্দ্রজয়ন্তী পালন করতে হচ্ছে এ বছর। তারপর তিনি এবং ইন্দ্রনীল দ্বৈতকণ্ঠে গাইলেন, ‘দাঁড়িয়ে আছো তুমি আমার গানের ওপারে’।

অনুসন্ধিৎসু চোখ দেখল, মুখ্যমন্ত্রীর অনতিদূরে দাঁড়িয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়। কর্ডলেস মাইক্রোফোন হাতে অনুষ্ঠানটি কার্যত পরিচালনাও করলেন তিনিই। মুখ্যসচিব রাজীব সিন্‌হাকে আজও কোথাও দেখা গেল না। ব্যাপারটা ক্রমশ আরও ইন্টারেস্টিং হচ্ছে।

রাত ৯.‌৩৫

সকাল থেকে দিনভর সোশ্যাল মিডিয়ায় যা রবি ঠাকুর খেলাম, তাতে এখন চোঁয়া ঢেকুর উঠছে। দ্রুত অ্যান্টাসিড দরকার। দেখি টুইটারে কিছু ফান ভিডিও পাওয়া যায় কিনা।

রাত ১০.‌১৬

মজার ভিডিও খুঁজতে গিয়ে টুইটারে ঔরঙ্গাবাদের রেললাইনটার কয়েকটা ছবি চোখে পড়ে গেল। লাইনের উপর ছড়ানো কয়েকটা পোড়া অথচ অক্ষত হাতরুটি, কিছু দলামোচড়া মলিন জামাকাপড়, কয়েকটা সস্তাদরের মাস্ক, হাওয়াই চপ্পল, নাইলনের থলে, তেলের শিশি। ওঁরা যা যা চেয়েছিলেন, সব দিয়েছে রাষ্ট্র। একটা ট্রেনও।

কী কিউট!‌ না? ‌

4 thoughts on “লকডাউন ডায়েরি – ৮ মে, ২০২০

  1. Khub valo laglo aajker dairy.valo thakben.”Basit theke” r aro age theke apnar lekha porchi.Mickel oen k niye ” holoi ba se ingrej” ekhono mone ache.

    Like

  2. আর পারছি না।
    শুধু অন্ধকারই দেখছি সামনে
    গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে
    আলোর দিশা দেখি না খুব একটা
    প্রাণপণে রবীন্দ্রনাথ আওড়েও বিশ্বাস টলে যাচ্ছে ক্রমশ।
    তাও আওড়ে যাচ্ছি কলের পুতুলের মত
    আরও আলো আরো আলো
    এই নয়নে প্রভু ঢালো

    Like

Leave a comment