
০৯.০৪.২০২০। বৃহস্পতিবার
সকাল ৭.৫৭
কাল রাতে বাড়ি ফিরে চমকে গিয়েছিলাম। দেখি, একতলা থেকে দোতলায় ওঠার সিঁড়িতে আমার এক জোড়া ব্রাউন লোফার খুব পরিপাটি করে রাখা আছে। কিন্তু যতদূর মনে পড়ছে, বেরোনর আগে ওটা দোতলা আর তিনতলার ল্যান্ডিংয়ে জুতোর র্যাকের উপর রাখা ছিল। নীচে এল কী করে! এ কি গুপি–বাঘার জুতো হয়ে গেল নাকি? লকডাউনের বাজারে তেমন হলে মন্দ হয় না। কিন্তু সত্যজিৎ তো আর নেই। জুতো আসবে কী করে! মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম। মা একচিলতে হাসিমাখা বিরক্তি নিয়ে বলল, ‘আর বলিস না! তোর বাবা দোতলা থেকে নিয়ে এসেছে। কত করে বারণ করলাম। কে শোনে কার কথা!’
রহস্য গেল। কিন্তু একটু মনও খারাপ হল— ভূতের রাজার জুতো পাওয়া হল না। কিন্তু আসলে হল গভীর চিন্তা। বুঝতে পারলাম, বাবার ডিমেনশিয়াটা অবশেষে সেট ইন করছে। কয়েকমাস আগেই জুতো কিনে দেওয়ার বায়না ধরেছিল। গাড়ি করে নিয়ে গিয়ে পছন্দসই জুতো কিনেও দিলাম। পায়ে দিয়ে শিশুর মতো খুশি হল। দোকান থেকে নতুন জুতো পরেই বাড়ি ফিরল। বাড়িতে থাকলেও সে জুতো এখন কোথায় লাট খাচ্ছে কে জানে! কিন্তু তারপরেও আবার আমার জুতো কেন নিয়ে এসেছে?
আজ সকালে চা দিতে গিয়ে উদ্বেগটা বাড়ল, যখন বাবা সটান প্রশ্ন করল, ‘তোমার জুতোটা কোথা থেকে কিনেছো? কত দাম নিয়েছিল? আমাকে ওই জুতোটা কিনে দেবে?’ বললাম, তোমাকে যে জুতো কিনে দিয়েছিলাম সেগুলো কী হল? বাবা একটা দুষ্টু হাসি হেসে বলল, ‘আছে তো। কিন্তু ওটা তো কালো রংয়ের। এটা ব্রাউন। তাই এইরকম একটাও চাই।’
নবতিপর এই শিশুকে কী বলব? লকডাউন বোঝাতে গেলে বুঝবে? কে জানে!
সকাল ৮.৩৩
আমাকে কি ধীরে ধীরে কামারপুকুরের গদাধর চট্টোপাধ্যায়ের মতো দেখতে হয়ে যাচ্ছে? ইদানীং ব্যাডমিন্টন–চর্চা রহিত ঈষৎ পৃথুল চেহারা। সামনে টেনে এনে কপালের খানিকটা ঢাকা দেওয়া ক্রমহ্রাসমান চুল। গালের দাড়িটা অবশ্য এখনও অতটা বাড়েনি। তবে অতীত বলছে, সময় দিলে হয়ে যাবে। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এই লুকটা সিরিয়াসলি ট্রাই করার কথা ভাবছিলাম। আয়নার আমিটা খ্যাক–খ্যাক করে হেসে বলল, লাগছে তো সদ্য ডিম ফেটে বেরোন উস্কোখুস্কো মুরগিছানার মতো। তার আবার এত স্টাইল আর লুক। হাঃ!
সকাল ৮.৪৫
কাল রাতে ডায়েরি পাবলিশ করতে একটু রাত হয়ে গিয়েছিল। মেসেঞ্জারে একের পর এক মেসেজ। কিছু উদ্বিগ্ন হোয়াট্সঅ্যাপ— ডায়েরি কোথায়?
এ তো উইথড্রয়াল সিম্পটম রে ভাই! নিজেকে কেউকেটা মনে হচ্ছিল। ভাবছিলাম, ওরে, তোর ডায়েরি তো হিট! তারপরেই ভিতরের আমিটা চোখ রাঙিয়ে বলল, ‘বেশি লেজ নাড়াস না। লোকের এখন অখণ্ড অবসর বলে এত পাত্তা দিচ্ছে। লকডাউনটা খুলুক। ডায়েরি–ফায়েরি কোথায় হুশ করে উড়ে যাবে দেখাও যাবে না।’
দিন শুরু হল ফিল্মমেকার বিকাশ খান্নার একটা টুইট দেখে এবং একা একা হেসে। লিখেছে, ‘আই রোট দিস অন মাই ফ্রিজ অন বিহাফ অফ মাই ফ্রিজ।’ সঙ্গে ফ্রিজের গায়ে লটকানো একটা নোটের ছবি। তাতে লেখা, ‘ইউ আর নট হাংরি। ইউ আর জাস্ট বোর্ড। ডোন্ট টাচ মি— রেফ্রিজারেটর।’
সকাল ৯.০৩
দেখলাম কলকাতা শহরের প্রথমসারির ডাক্তাররা নিজেদের মতো করে সোশ্যাল মিডিয়ায় একটা ক্যাম্পেন শুরু করেছেন— ‘টেস্টিং টেস্টিং অ্যান্ড টেস্টিং’। যার মোদ্দা কথা, আরও বেশি করে করোনাভাইরাস টেস্ট করাতে হবে। ক্রমাগত পরীক্ষা করে যেতে হবে। অভিজ্ঞ চিকিৎসকদের অনেকেই একটি পোস্টার শেয়ার করেছেন। তাতে লেখা— ‘আজ বা কাল ধাপে ধাপে লকডাউন শিথিল করা হবে। তখন যাতে আমরা এবং আমাদের প্রিয়জনরা বাইরের পৃথিবীতে নিরাপদ থাকতে পারি, সেটা দেখা জরুরি। সেটা নিশ্চিত করার একমাত্র উপায় হল এখনই র্যানডম টেস্ট শুরু করা। ক্লাস্টার টেস্টিং হলে কিট্স বাঁচানো যাবে। কিন্তু কম হারে টেস্ট করানো হলে কড়াকড়ি উঠে গেলে আবার প্রবল সংক্রমণের ঢেউ আসার সমূহ সম্ভাবনা। সো, টেস্টিং টেস্টিং অ্যান্ড টেস্টিং।’ ডাক্তার অর্জুন দাশগুপ্ত তাঁর ওয়ালে এই মর্মে চিকিৎসক কুণাল সরকারের একটি ভিডিও–ও শেয়ার করেছেন।
ডায়েরিতে এই তথ্যটা লেখা থাকা জরুরি। অত্যন্ত জরুরি। ভবিষ্যতের জন্য। ইতিহাসের জন্য।
সকাল ১০.৩০
এইমাত্র প্যাঁ করে একটা টেক্সট মেসেজ ঢুকল। পাঠাচ্ছে জনৈক বিএইচ–অঙ্কিতা। ‘ভালো বন্ধু বা বান্ধবী পেতে যোগাযোগ করুন (+২০)।অফিসে আসে।’ সঙ্গে তিন–তিনটে মোবাইল নম্বর। এ কি লকডাউনে অফিস ডেলিভারি? কারণ, এ জিনিসের তো আর হোম ডেলিভারি সম্ভব নয়। আরও একটা প্রশ্ন মাথায় এল, আমাকে কি বাই সেক্সুয়াল ভাবল? নইলে ‘বন্ধু বা বান্ধবী’ লিখল কেন? তারপর মনে হল, নাহ্, তা নয়। বাল্ক এসএমএস পাঠিয়েছে তো। যার যা লাগে।
সকাল ১০.৫১
আজ আবার ব্রাঞ্চ। টপ রেমন খেলাম। লাঞ্চ স্কিপ করলাম। অভ্যেস বদলে যাচ্ছে। সাহেব হয়ে যাচ্ছি নাকি? রোদে দাঁড়িয়ে গায়ের রংটা একবার ভাল করে দেখতে হবে তো!
দুপুর ৩.২০
অফিসে পৌঁছে প্রথমেই দেখলাম, ওডিশা সরকার লকডাউন বাড়িয়ে দিচ্ছে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত। ১৭ জুন পর্যন্ত রাজ্যে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হবে। উত্তরপ্রদেশ এবং মহারাষ্ট্রের পর ওডিশাতেও মাস্ক বাধ্যতামূলক করা হল। এটা এনাফ হিন্ট যে, লকডাউন নিয়ে সারা দেশও ওডিশার পথেই হাঁটবে। অর্থাৎ, ১৪ তারিখ লকডাউন না ওঠা প্রায় নিশ্চিত। সার্বিক লকডাউন থাকবে? নাকি ধাপে ধাপে শিথিল করা শুরু হবে? সেটাই দেখার। সেটা অবশ্য ১৪ তারিখের আগেই জানা যাবে নিশ্চিত। ফলে এখন যা দাঁড়াল, ১৪ তারিখেই ‘লকডাউন ডায়েরি’ লেখার শেষ হবে বলে যে ভেবে রেখেছিলাম, তা হবে কিনা, তা নিয়েও একটা মহান অনিশ্চয়তা দেখা দিল। সার্বিক লকডাউন জারি থাকলে কি ডায়েরি লেখাও সেই অনুযায়ী বাড়াব? সার্বিক লকডাউন উঠে গিয়ে আংশিক থাকলে ডায়েরি লেখা জারি থাকবে? নাকি লকডাউন নিয়ে যে সিদ্ধান্তই হোক, ডায়েরি আর লিখব না? এটা ভেবে দেখতে হবে। গভীর চিন্তার বিষয়। সিপিএম হলে নিশ্চয়ই পলিটব্যুরো মিটিং ডাকত। আমার বুড়ো আমি একাই। দেখা যাক কী হয়।
ওহ্ আরেকটা কথা। অফিসে আসার আগে বারান্দার কড়া রোদে দাঁড়িয়ে দেখলাম, সেই কালোমানিকই আছি। গায়ের সাহেবি রংটা বোধহয় ওয়াশরুমের আয়নায় টিউবলাইটে অপটিক্যাল ইলিউশন ছিল।
দুপুর ৩.২৩
অফিসে সুরজিৎ’দার সঙ্গে দেখা হল। সাতের দশকের হিরো ফুটবলার মুখে মাস্ক পরে কেমন বাধ্য ছেলের মতো ঘুরছেন। দেখা হলেই কুশল প্রশ্ন করেন। আজও করলেন। আমার আবার মনে পড়ল ঘটনাটা। ক্লাস সেভেনে নরেন্দ্রপুরের রথযাত্রা লিগের ফাইনালে ৩–১ গোলে জিতলেও একটা গোল হজম করে ঝরঝর করে মাঠেই কেঁদে ফেলেছিলাম। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত প্রধান অতিথি বলেছিলেন, ‘একটা বাচ্চা গোলকিপার ম্যাচ জিতেও একটা গোল খেয়ে খুব কান্নাকাটি করছে দেখলাম। ওকে বলছি, সব ম্যাচে হারজিৎ থাকে। তোমরা জিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছো। সেটা ভাবো। একটা গোল খাওয়াটা বড় করে দেখো না। এখনও অনেক ম্যাচ খেলা বাকি।’
অনেক পরে অশোক’দার আমন্ত্রণে ‘খেলা’ পত্রিকার জন্মবার্ষিকীতে ডাবল উইকেট টুর্নামেন্টের মাঠে আলাপ হওয়ার পর সুরজিৎ’দাকে ঘটনাটা বলেছিলাম। স্বভাবতই ওঁর মনে ছিল না। থাকার কথাও নয়। ঘটনাচক্রে, তুলনায় দুর্বল পার্টনার নিয়েও সেই টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে হেরে রানার্স হলাম। বিপক্ষ চ্যাম্পিয়ন টিমের জুড়ির একজনের নাম ছিল স্নিগ্ধদেব সেনগুপ্ত। তার বাবার নাম সুরজিৎ সেনগুপ্ত। তবে সেদিন আর কান্নাকাটি করিনি।
দুপুর ৩.৫৮
বিপ্লব বলছিল, লকডাউনের কারণে রিকশা আর টোটোচালকদের জীবিকা বদলে গিয়েছে। সকলে ঘরবন্দি। সওয়ারি নেই। ফলে পেটের দায়ে তারা এখন ভ্যান রিকশা চালিয়ে বাড়ি বাড়ি সব্জি নিয়ে যায়। ভাল স্টোরি। তেমন হলে এটাই সম্ভবত করোনার কারণে প্রথম আর্থ–সামাজিক বদল।
বিকেল ৫.১৯
নবান্নে মুখ্যমন্ত্রী–সহ রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে বণিকমহলের বৈঠক চলছে। লাইভ টেলিকাস্ট হচ্ছে। তার আগে ভিডিও প্রেস কনফারেন্স হয়েছে। যেটুকু শুনতে পাচ্ছিলাম, একদিনে পশ্চিমবঙ্গে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ১২ জন। এখন আক্রান্তের সংখ্যা ৮০। করোনা নিয়ে ডেটা অ্যানালিসিস সেল গঠন করেছে রাজ্য সরকার। আরও যা যা হওয়া উচিত।
এই বিকেল ৫.১৯ মিনিট পর্যন্ত ভারতে আক্রান্ত ৫,৪৮২ জন (আজ পজেটিভ এসেছে ৩২১ জনের রিপোর্ট)। মৃত ১৮৬ (আজ ৮ জন)। সুস্থ হয়েছেন ৫৬৯ জন। আর সারা পৃথিবীতে আক্রান্ত ১১,০৩,২৬৯ জন। মৃত ৮৯,৪২৬ জন। সুস্থ হয়েছেন ৩,৩৭,২৭৬ জন।
এই পরিসংখ্যান দেখতে দেখতেই একটা হোয়াট্সঅ্যাপ ঢুকল। খুলে দেখলাম একটা পেন্টিংয়ের ছবি। যেটা দেখে ধাঁ করে মাথাটা ঘুরে গেল। অধুনা দিল্লিনিবাসী শিল্পীকে মেসেজে তখনি প্রশ্ন করলাম, এই ছবিটা কি ওঁর অনুমতিসাপেক্ষে আমার ব্লগে ব্যবহার করতে পারি? দীপা দাশমুন্সি জবাব দিলেন, ‘স্বচ্ছন্দে। মাই প্লেজার।’ রায়গঞ্জে হেরে যাওয়ার পর থেকেই প্রিয়’দার ঘরনি তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিরিয়াসলি বড় ক্যানভাসে তেলরঙে ছবি আঁকা শুরু করেছেন বলে শুনেছিলাম। যা দেখলাম, করোনা এবং তজ্জনিত লকডাউনের অবসর তাঁর স্কিলকে প্রায় এক অবিশ্বাস্য পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। দীপার প্রতি কৃতজ্ঞতা–সহ আজকের ডায়েরির কভারে তার নমুনা রইল।
সন্ধ্যা ৭.৩২
ধারাভির প্রায় ৭ লক্ষ বাসিন্দার র্যাপিড করোনা টেস্ট করানোর সিদ্ধান্ত নিল মহারাষ্ট্র সরকার। আনানো হচ্ছে ১ লক্ষ র্যাপিড টেস্ট কিট। এই সিদ্ধান্ত, এককথায় যুগান্তকারী। ‘হটস্পট’ বলে চিহ্নিত করে দিল্লির ময়ূরবিহার, বেঙ্গলি মার্কেট, দ্বারকা এবং লাগোয়া উত্তরপ্রদেশের নয়ডার সেক্টর ফাইভ পুরোপুরি সিল করে দেওয়া হল।
কলকাতায় নাগেরবাজারে বেসরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক করোনায় আক্রান্ত। তাঁকে আপাতত আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। বলা হচ্ছে, আক্রান্ত বাবা–মায়ের চিকিৎসা করার সূত্রেই সংক্রমিত হয়েছেন ওই চিকিৎসক।
রাত ১০.১১
ট্রাম্পের টাকা না দেওয়ার হুমকিতে কিন্তু কেবলে গিয়েছে ‘হু’। সংস্থার প্রধান বলেছেন (আসলে মিনতি করেছেন), ‘কোভিডের রাজনীতিকরণ করবেন না। এখন দরকার সকলের মধ্যে ঐক্য। তাহলেই একমাত্র করোনভাইরাসের মোকাবিলা করা সম্ভব।’ ওহ্, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এখনও আইসিইউ–তে। তবে তাঁর অবস্থার খানিক উন্নতি হয়েছে।
রাত ১০.৩৪
একটি ইতালীয় সেন্স অফ হিউমার দিয়ে আজকের ডায়েরি লেখা বন্ধ করি। সেই ইতালি, যেখানে এখনও পর্যন্ত সারা পৃথিবীতে মৃতের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এটা পড়েও একা একাই হাসলাম।
‘এটা সত্যি যে আমরা, ইতালীয়রা এখন খুব কঠিন অবস্থায় আছি। কিন্তু বলুন তো এ জিনিস আর কোন দেশে পাবেন, যেখানে ডাক্তারদের অ্যাপ্রন সেলাই করছে আরমানি। রেসপিরেটর তৈরি করছে ফেরারি। ফেস মাস্ক তৈরি করছে গুচ্চি আর স্যানিটাইজিং জেল বানাচ্ছে বুলগ্যারি।
উই মে এন্ড আপ ইন হেল, বাট ইন স্টাইল!’
Best diary after your tooth problem started. Keep it up.
LikeLike
This diary is divided into two halves — pre tooth ache and post tooth ache 🙂
LikeLike
লকডাউন থাকুক বা না থাকুক,ডাইরি যেন থেকে যায়….
LikeLike
ধন্যবাদ। খুব চেষ্টা করব।
LikeLike
লিখে যাস, ভালো লাগছে পড়তে।
LikeLike
Means a lot when an ex colleague says
LikeLike